TASLIMA NASRIN
তসলিমা নাসরিন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম আপোসহীন নারীবাদী লেখিকা। লেখালেখির জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন আবার বিতর্কিতও হয়েছেন। নারীর অধিকারের কথা বলতে গিয়ে তিনি শুধু ধর্মীয় মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার হননি, গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মৌলবাদীরা সারাদেশ জুড়ে তাঁর ফাঁসির জন্য আন্দোলন করে, এমনকী তাঁর মাথার মূল্য ঘোষণা করে। পরিণামে, ১৯৯৪ সালে তিনি তাঁর প্রিয় স্বদেশ থেকে বিতাড়িত।
মানবতার পক্ষে লেখা তাঁর তথ্যভিত্তিক উপন্যাস লজ্জা, নিজের শৈশব স্মৃতি নিয়ে আমার মেয়েবেলা, প্রথম যৌবনের স্মৃতি নিয়ে লেখা উতল হাওয়া, আত্মজীবনীর তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড দ্বিখণ্ডিত এবং সেই সব অন্ধকার- বই পাঁচটি বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছে।
তসলিমা ভারত থেকে দু'বার পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ইওরোপিয়ান পার্লামেন্ট থেকে মুক্তচিন্তার জন্য সাখারভপুরস্কার, সহিষ্ণুতা ও শান্তি প্রচারের জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার, ফরাসি সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, সিমোন দ্য বোভোয়া পুরস্কার, ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ফ্রান্সের এডিট দ্য নান্ত পুরস্কার, বেলজিয়ামের রয়্যাল আক্যাডেমি অব আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড লিটরেচার থেকে অ্যাকাডেমি পুরস্কার, সুইডেনের লেখক সংস্থা থেকে কুর্ট টুখোলস্কি পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার তথা সম্মাননায় ভূষিত তিনি। বেলজিয়ামের গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ লোভেইন, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিস, প্যারিসের ডিডেরো ইউনিভার্সিটি থেকে পেয়েছেন সাম্মানিক ডক্টরেট। ফেলোশিপ করেছেন হার্ভার্ড এবং নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ইংরেজি ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান, আইসল্যান্ডিকসহ তিরিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তসলিমার বই। মানববাদ, মানবাধিকার, নারী-স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তা বিষয়ে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন মঞ্চে, এবং হার্ভার্ড, ইয়েল, অক্সফোর্ড, এডিনবরা, সরবোনের মতো বিশ্ববিশ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিয়েছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সারা বিশ্বে তিনি একটি আন্দোলনের নাম।