হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত
শুধু দাতা, পরিত্রাতা অথবা দেশনেতা হিসেবে নয়, চিত্তরঞ্জন ছিলেন তাঁর সমকালে দেশর সবচেয়ে প্রখ্যাত আইনজীবী। তদুপরি, তাঁর সাহিত্যপ্রতিভার বিকাশও ঘটেছিল কবিতায়, গল্পে, প্রবন্ধে। কিন্তু এ-সকল পরিচয়ই লীন হয়ে একাত্ম হয়েছিল তাঁর ‘দেশবন্ধু’ নামে। শ্রীচৈতন্য থেকে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র হয়ে মুজিবর রহমান, অমর্ত্য সেন অবধি বহু শ্রেষ্ঠ বাঙালির আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু আর কোনো বাঙালি তাঁর মতো দেশবন্ধু হয়ে উঠতে পারেননি। গীতায় বর্ণিত কর্মযোগের সঙ্গে জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের এমন সমন্বয় ঘটেনি আর কোনো বাঙালির জীবনে। অর্থ, খ্যাতি ও প্রতিপত্তির চূড়ায় অবস্থানকালে আর কেউ আত্মোৎসর্গ করেননি তাঁর মতো। পরাধীন ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে তিনিই প্রথম বাঙালিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলেন। এর বহু আগে যখন তিনি বিলেতে ছাত্র, তখনই ভারতীয়দের উদ্দেশে জন ম্যাকলিনের অপমানজনক উক্তির তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। এতই অমোঘ ছিল সেই প্রতিবাদ যে, ম্যাকলিনকে পার্লামেন্টের সদস্যপদ পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। ইনার টেম্পল থেকে সসম্মানে উত্তীর্ণ চিত্তরঞ্জন বিলেত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর জীবনের প্রথম মামলাতেই তীব্র ধিক্কার জানালেন শ্বেতাঙ্গ বিচারককে তাঁর পক্ষপাতদৃষ্ট আচরণের জন্য। শুরু হল এক নতুন অধ্যায়। এর পর তিনি জড়িয়ে পড়লেন একের পর এক বিখ্যাত মামলায়। কিন্তু তাঁর খ্যাতি দেশময় ছড়িয়ে পড়ল যখন আলিপুর বোমা মামলায় অরবিন্দ ঘোষের পক্ষে তিনি সওয়াল শুরু করলেন। কী হয়েছিল এই মামলার পরিণতি, আমরা তা জানি। যা আমরা জানি না, তা হল কীভাবে কবি চিত্তরঞ্জন ব্যবহারজীবী চিত্তরঞ্জন হয়ে উঠলেন, কীভাবে সেই বিখ্যাত ব্যারিস্টার নিজের সবকিছু ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন দেশসেবায়, কীভাবে তাঁর সমসময়ে শুধু বাংলা নয়, আসমুদ্র হিমাচলকে তিনি অনুপ্রাণিত করলেন দেশসেবার মন্ত্রে। দেশবন্ধুর জীবনের সেই প্রত্যেকটি দিন, তার অনুপুঙ্খ বিবরণ এই প্রথম প্রকাশিত হল এতাবৎ অপ্রকাশিত এক দুর্লভ পাণ্ডুলিপি থেকে।
Reviews
There are no reviews yet.