• 0 Items - 0.00
    • No products in the cart.

Blog

BISWAJAYEE VIVEKANANDA

বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দ: ঋষি দাস প্রণীত জীবনীগ্রন্থ

স্বামী বিবেকানন্দ—পৃথিবীর বিস্ময়। তাঁর নাম উচ্চারণ করলেই এক অনন্য আলোড়নের সৃষ্টি হয়। জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি যে অসীম শক্তি, প্রজ্ঞা এবং মানবকল্যাণের দিশা রেখে গেছেন, তা শুধু ভারতবর্ষ নয়, সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। তাঁর জীবন ও কর্মকে নতুন করে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেছেন ঋষি দাস তাঁর অনন্য গ্রন্থ “বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দ”–এ, যা প্রকাশ করেছে Parul Prakashani

এই গ্রন্থ কেবল একটি জীবনী নয়; এটি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে স্বামীজির মহত্ত্বকে শুধু ঐতিহাসিক তথ্য ও তত্ত্বে নয়, বরং ইতিহাসবোধ ও মৌলিক বিশ্লেষণে উন্মোচিত করা হয়েছে। আজকের সোশ্যাল মিডিয়া-নির্ভর সময়ে, যেখানে মানুষ ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনায় মগ্ন, সেখানে এই গ্রন্থ পাঠককে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এক চিরন্তন আলোয়—এক মহামানবের বাণী ও কর্মে।

বিস্ময়ের বিস্ময়: স্বামীজির জীবন

বিবেকানন্দই সেই বিস্ময়, যিনি বেদান্ত ও বিজ্ঞানকে ধারণ করেছিলেন অভিন্ন অভিজ্ঞানে। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন জাতিকে সহস্র বছরের জড়িমা থেকে মুক্ত করেছিলেন তিনি, কিন্তু অতীত ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেননি। শিকাগো ধর্ম মহাসভায় তাঁর কালজয়ী বক্তৃতা কেবল হিন্দু ধর্মের জয়ধ্বনি নয়—এটি ছিল সমগ্র প্রাচ্যের পুনর্জাগরণ। পশ্চিমের দ্বারা পদদলিত পূর্ব এ বক্তৃতার মাধ্যমে ফিরে পেয়েছিল তার হারানো গৌরব।

মাত্র উনচল্লিশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে যে বিশ্বজোড়া আলোড়ন তিনি তুলেছিলেন, তা অতুলনীয়। হার্ভার্ডের অধ্যাপক থেকে আমেরিকার ধনাঢ্য শিল্পপতি, সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর বাগ্মিতায়। এমনকি বিজ্ঞানমনস্ক নিকোলা টেসলাও তাঁর বাণীতে খুঁজে পেয়েছিলেন আধুনিক বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত।

শুধু পাশ্চাত্যই নয়, স্বদেশবাসীও তাঁর অগ্নিস্পর্শী বক্তৃতা ও রচনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাঘা যতীন থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র পর্যন্ত তাঁরই মানসপুত্র। তাই বিবেকানন্দকে কেবল এক হিন্দু সন্ন্যাসী বলা যায় না—তিনি নিষ্কলুষ মানবতাবাদের প্রতীক, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণই ছিল তাঁর একমাত্র অভীষ্ট।

“বিশ্বজয়ী” নামের তাৎপর্য

গ্রন্থের নামকরণ—বিশ্বজয়ী—এখানে গভীর তাৎপর্য বহন করে। রাজনৈতিক অর্থে জয় নয়, অস্ত্র নয়—বরং যুক্তি, মেধা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অসৎ ও অসত্যকে জয় করেছিলেন তিনি। তাঁর যাত্রাপথ—আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে পৃথিবীর নানা দেশ—ছিল সত্যপ্রচারের মহাযজ্ঞ। তিনি শুধু নিজের কণ্ঠে নয়, শিষ্যদের মাধ্যমে, এমনকি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মধ্য দিয়েও জয় করেছেন বিশ্বমানবতার হৃদয়।

“বিশ্বজয়ী” শব্দটি তাই এখানে কেবল অলঙ্কার নয়, বাস্তব সত্য। নরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার যে যাত্রা, তার প্রতিটি অধ্যায় বিশ্বকে জয় করারই ইতিহাস।

লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি: এক নতুন আবিষ্কার

ঋষি দাস এই গ্রন্থে কেবল তথ্য সাজাননি, বরং এক ভিন্ন আলোয় তুলে ধরেছেন স্বামীজিকে। কোথাও তিনি করুণাসিন্ধু, আবার কোথাও অবিচল লক্ষ্য ও প্রত্যয়ের প্রতীক। তিনি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, তবুও মাতৃডাকে সাড়া দিতে দ্বিধাহীন। তিনি বিজ্ঞানমনস্ক, কিন্তু আধ্যাত্মিকতাবিহীন ভোগবাদী জীবনের প্রতি তাঁর ঘৃণা প্রবল।

লেখক দেখিয়েছেন, স্বামীজির আত্মবোধ কেমন করে ক্রমাগত পরিবর্তন আনছিল তাঁর জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। সাধারণ মানুষকে ভালবাসা, তাঁদের মঙ্গলের জন্য ভাবা, আবার একইসঙ্গে শিষ্যদের প্রতি কঠোরতা—এসবের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে তাঁর জটিল অথচ উজ্জ্বল মানবিক রূপ।

প্রকাশকের অবদান

এই গ্রন্থের প্রকাশে Parul Prakashani যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিছক প্রকাশনা নয়—এটি এক সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার প্রকাশ। এর আগে তাঁরা যেভাবে অমূল্য পাণ্ডুলিপিকে রূপ দিয়েছেন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে, ঠিক তেমনই এবার স্বামীজির জীবনীকে তাঁরা সমকালীন পাঠকের কাছে নিয়ে এসেছেন।

প্রকাশক গৌরদাস সাহার অবদান এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বহু বছর ধরে অপ্রকাশিত থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিকে উদ্ধার করে জনসমক্ষে আনা নিছক পেশাগত কাজ নয়, এটি এক মহৎ দায়িত্বপালন। তাই এই প্রকাশনাকে কেবল অভিনন্দন নয়, গভীর কৃতজ্ঞতাও প্রাপ্য।

আজকের প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়

আজকের যুবসমাজ দ্রুতগামী জীবনে, অনলাইন রিলস আর ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিভোর। সেখানে স্বামীজির বাণী আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। তাঁর জীবন বলে দেয়—আত্মবিশ্বাস, আত্মশক্তি ও আত্মত্যাগ ছাড়া সত্যিকার মুক্তি নেই।

ঋষি দাসের এই বই তাই কেবল একটি জীবনী নয়; এটি এক “আরোগ্যের মহৌষধ”। পাঠক এর মাধ্যমে আবিষ্কার করবেন এক অন্য বিবেকানন্দকে—যিনি সর্বত্যাগী, বিজ্ঞানমনস্ক, মানবতাবাদী এবং বিশ্বজয়ী।

উপসংহার

বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দ নিছক একটি বই নয়; এটি এক মহামানবের জীবন ও দর্শনের মহাকাব্যিক পুনর্যাপন। ঋষি দাসের মৌলিক বিশ্লেষণ ও Parul Prakashani-র দায়বদ্ধ প্রকাশনায় এই গ্রন্থ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।

আজকের দিনে স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা যতটা প্রয়োজনীয়, আগে কখনো ততটা ছিল না। তাই এই বই শুধু সংগ্রহযোগ্য নয়, পড়বার মতোও। একবার পাঠ করলে মনে হবে—স্বামীজির বিস্ময় আজও আমাদের পথ দেখায়, আমাদের চিন্তাকে শুদ্ধ করে, আমাদের জয়ী হতে শেখায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *