সমরেশ-সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র গোগোল শিশুকিশোরদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। অশোক ঠাকুর চরিত্রটি অবশ্য একেবারেই ছোটোদের জন্য নয়, খুব সচেতনভাবেই সমরেশ তাকে সৃষ্টি করেছিলেন পরিণতমনস্ক পাঠকের জন্য। যেখানে সমরেশের মুনশিয়ানা, তা হল বাংলা সাহিত্যে গড়পড়তা গোয়েন্দা চরিত্রকে যেরকম লারজার দ্যান লাইফ করে পেশ করা হয়, অশোক সেসব চেনা ছকের বাইরে। একে তো তার বয়স অনূর্ধ্ব তিরিশ, উপরন্তু তার হাবভাব চালচলন একেবারেই পাশের বাড়ির ছেলেটির মতন। ফলে বাস্তবতার বাড়তি একটা মাত্রা যোগ হয় এই কাহিনিগুলিতে।
অশোকের রহস্য-উদ্ঘাটন পদ্ধতি একদিকে যেমন পাঠককে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, তেমনই টানে তার স্বাধীন চলাফেরা, জীবনযাপন এবং মেলামেশার বিচিত্র পরিমণ্ডল। জ্ঞাতিভাই গোবিন্দের স্ত্রী কাঞ্চনের সঙ্গে অশোকের যে অম্লমধুর সম্পর্ক, তার পরতে পরতেও কত মেঘ আর রোদ্দুরের খেলা! বাঙালি মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের ঈষদচ্ছ গলিঘুঁজিতে পাঠক ঘুরে বেড়ান অশোকের সঙ্গে। সফর শেষে প্রাপ্তি শুধু রহস্যভেদেই নয়, পরিচিত মানুষের এতাবৎ অপরিচিত জটিল মনোজগতের গূঢ় অভিসন্ধিময় দিকগুলিকে হঠাৎ আবিষ্কার করে ফেলার অপ্রত্যাশিত আনন্দেও!
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিকের সুযোগ্য পুত্র নবকুমার বসুর সৌজন্যে, তাঁরই তত্ত্বাবধানে দীর্ঘকাল ধরে অপ্রকাশিত থাকা এই চারটি উপন্যাস – দু ‘ মুখো সাপ, ম্যাকবেথ: রঙ্গমঞ্চ কলকাতা, একটি অস্পষ্ট স্বর ও রাজধানী এক্সপ্রেসের হত্যারহস্য – একত্রে সংকলিত হল বর্তমান সংগ্রহে।
আর কোনও বাঙালি রহস্যভেদী কি অশোক ঠাকুরের মতো অপরাধতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বে সমান পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছেন? সম্ভবত না যেহেতু অশোককে নির্মাণ করেছেন যে মহান কথাসাহিত্যিক বাঙালিকে তাঁর মতো নিবিড়ভাবে জানতে-চিনতে পারেননি আর প্রায় কেউই। অশোক আসলে সমরেশের-ই অল্টার ইগো। বাংলা সাহিত্যে বিদেশি গোয়েন্দা সাহিত্যের প্রত্যক্ষ প্রভাববর্জিত প্রথম সার্থক রহস্যভেদী গোয়েন্দা হিসেবে আমরা তাকেই অভিনন্দিত করতে পারি।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় / ACHARYA PRAFULLA CHANDRA RAY
কথাপুরুষ / KATHAPURUSH
আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু / ACHARYA SANTYENDRA NATH BASU
Sahitya Chayan-8 / সাহিত্য চয়ন -8 
Reviews
There are no reviews yet.