বাংলার প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে বাঙালির অজ্ঞতা সীমাহীন। রবীন্দ্রনাথের সমবয়সী বিদুষী এই নারী চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাধনায় যে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন, তার তুলনা মেলা ভার। বর্তমান গ্রন্থে, প্রামাণ্য তথ্যাদি সহযোগে শুধু কাদম্বিনীর বিশ্বস্ত জীবনীই রচিত হয়নি, অনুসন্ধানী ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে আলোকিত হয়েছে সমসময়ও।
কাদম্বিনীর সাফল্যকে লেখক কোনো ব্যক্তিবিশেষের একক, মসৃণ উত্তরণ হিসেবে দেখাননি। তাঁকে স্থাপন করা হয়েছে তৎকালীন বঙ্গসমাজের দ্বন্দুগুলির প্রেক্ষাপটে। সেই সুবাদে নারী হিসেবে তাঁর সংগ্রামের চিহ্নগুলি যেমন ভাস্বর হয়ে উঠেছে, তেমনই মূর্ত হয়েছে তাঁর পুরুষ সহযোদ্ধাদের প্রগতিশীল ভূমিকাও। প্রসঙ্গত, তাঁর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বলা যায়। সে সময়ে মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণের বিরুদ্ধে যে সকল অযৌক্তিক যুক্তি খাড়া করা হত, এই দম্পতি তার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
১৮৮৬ সালে কাদম্বিনী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ ডিগ্রি পান। ১৮৯২-এ যাত্রা করেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশে। ১৮৯৩-এ এডিনবার্গ থেকে এল আর সি পি, গ্লাসগো থেকে এল আর সি এস এবং ডাবলিন থেকে জি এফ পি এস উত্তীর্ণ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। দেশে ফিরে লেডি ডাফরিন কলেজ হাসপাতাল ও ইডেন হাসপাতালে কাদম্বিনী শিশু ও মহিলাদের চিকিৎসা শুরু করেন। গরিব মহিলাদের চিকিৎসা করতেন নিজের বাড়িতে বিনা পারিশ্রমিকে। বেনিয়াটোলা লেন ও সুকিয়া স্ট্রিটে তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বার ছিল। তিনি যে শল্যচিকিৎসাতেও পারদর্শিনী ছিলেন, তা জানা যায় বেঙ্গলি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন থেকে।
চিকিৎসাশাস্ত্রের পাশাপাশি কাদম্বিনীর উৎসাহের ক্ষেত্র ছিল বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি। তাঁর উদ্যোগে শিকাগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বসংস্কৃতি মেলায় পৌঁছে গিয়েছিল বাংলার শিল্পসম্ভার। দেশের সামগ্রিক উন্নতিবিধানে রাজনীতির প্রগতিশীল ভূমিকা সম্পর্কেও তিনি অনবহিত ছিলেন না। ১৮৮৯-এ বোম্বাই-এ অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে যে ছ-জন মহিলা প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, কাদম্বিনী ছিলেন তাঁদের অন্যতমা। ১৯০৬ সালে কলকাতায় তিনি এক মহিলা সম্মেলনের আয়োজন করেন। ১৯০৮-এ মহাত্মা গান্ধির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সমর্থনে আয়োজিত একটি সভায় সভাপতির আসন অলংকৃত করেন। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় ট্রানসভালের ভারতীয় শ্রমিকদের দুর্দশা দূর করতে তাঁর তহবিল সংগ্রহ অভিযানের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।
Reviews
There are no reviews yet.