একটি-দুটি ঘটনাকে লক্ষ করে ছড়া বাঁধেন-নি সুকুমার রায়, তাঁর সমস্ত সমাজদৃষ্টিকে অন্তর্মূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়ে দেখতে পেয়েছেন তিনি আমাদের নানারকমের ব্যাধি, বোধ করেছেন করুণা, তারপরে তাকে প্রকাশ করেছেন একটা উলটো খেয়ালের ফুর্তিভরা ছাঁদে। আর তার ফলে, একইসঙ্গে তাঁর মধ্যে আমরা পেয়ছি অফুরন্ত কৌতুককণা, জীবনের সঙ্গে মমতাময় সংযোগের বোধ, আর এইভাবে তাঁর উচ্চারণগুলি আমাদের জীবনে গেঁথে গেছে যেন প্রবাদতুল্য। _শঙ্খ ঘোষ
‘ছন্দনৈপুণ্য, কল্পনার শক্তি এবং চরিত্র উদ্ভাবনের ক্ষমতায়’ ‘আবোল তাবোল’ (১৯২৩) বাংলা শিশুসাহিত্যে শ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলির অন্যতম। ‘যা উদ্ভট, যা আজগুবি’ তা এই পদ্যসংকলনের বিষয় হলেও অনেকেরই মতে, এর ভিতরে প্রচ্ছন্ন রয়ে যায় ‘গূঢ় অনেক সামাজিক অর্থের দ্যোতনা, সমকালীন প্রতিবিম্বন।’ কিন্তু একমাত্রিক রূপেকর ছাঁচে ফেলে দিয়ে এ লেখাগুলিকে ভাবতে গেলে খাটো করে ফেলা হয় বস্তুজগৎকে বিশেষিতভাবে দেখার তাঁর গভীর কবিত্বময় শক্তিকেই। বরং ‘বহুদর্শিতায় ভরা’ তাঁর লেখার ‘আনন্দময় এই সামর্থ্য’ আসলে হয়তো ‘আমাদের এই জীবনযাপনকে আরও একটু সহনীয় করে তোলার ফুর্তিভরা উপাদান।’ মাঘ ১৩২১ বঙ্গাব্দ থেকে ভাদ্র ১৩৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত সন্দেশ পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত ৪৬টি ছড়া নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৩-এ ‘আবোল তাবোল’-এর আত্মপ্রকাশ। এর মাত্র কয়েকদিন আগে ১০ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন সুকুমার রায়। মৃত্যুশয্যাতেও অব্যাহত ছিল প্রকাশিতব্য গ্রন্থের পাণ্ডুলিপির পরিমার্জন ও সংশোধন, প্রচ্ছদচিত্রণ ও ডামিকপির রূপায়ণ।
সুকুমার রায়
(৩০ অক্টোবর ১৮৮৭_১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩)
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র সুকুমার বাংলা শিশুসাহিত্যে এক কালজয়ী স্রষ্টা। প্রতিভার উৎকর্ষে তিনি অনায়াসে তুলনীয় এডওয়র্ড লিয়র কিংবা লুইস ক্যারলের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই আমাদের প্রথম মেতে ওঠা ‘অসম্ভবের ছন্দেতে’। বহুমুখী প্রতিভাধর পিতার সার্থক উত্তরাধিকারী সুকুমার স্বীয় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন অলংকরণ, ফোটোগ্রাফি, এমনকী মুদ্রণ প্রযুক্তিতেও।
১৯১৫-সালে পিতার মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকার দায়িত্বভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। এখানেই ছাপা হতে থাকে তাঁর সেইসব ‘উদ্ভট, অদ্ভুত, সরস, কৌতুককর’ লেখা ও আঁকা যা (তাঁর মৃত্যুর পর) একে একে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘আবোল তাবোল’, ‘পাগলা দাশু’, ‘খাই খাই’, ‘হ য ব র ল’ প্রভৃতি গ্রন্থে। ছড়া, কবিতা ও নানা ধরনের গদ্যরচনা ছাড়াও লিখেছেন ‘শব্দকল্পদ্রুম’, ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’ এবং ‘চলচ্চিত্র চঞ্চরী’র মতো আশ্চর্য নাটিকা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অকালপ্রয়াত যুবা-বন্ধুটির একমাত্র সন্তান পরবর্তীকালের বিশ্ববন্দিত চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়।
Reviews
There are no reviews yet.