খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী।
পরাক্রান্ত গৌড় সাম্রাজ্যে ঘুণ ধরেছে।
সিংহাসনে আসীন অশীতিপর লক্ষ্মণ সেন এবং তাঁর দুই পুত্র যুবরাজ কেশব ও বিশ্বরূপ অনুসৃত ব্রাহ্মণদের নির্বিচার ভূ-দান নীতি সাম্রাজ্যের কোণে কোণে ধূমায়িত করছে অসন্তোষ। রাজধর্ম পালনের নামে চলছে প্রজাপীড়ন। ক্ষুব্ধ বণিককুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে দেশ, ধসে পড়ছে সেন সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক ভিত। রাজধানী লক্ষ্মণাবতী প্লাবিত হচ্ছে অক্ষম কবিকুল সৃজিত শৃঙ্গার রসে। নব্য ও প্রাচীন কবিদের মধ্যে ক্রমেই তীব্রতর রাজানুগ্রহলাভের প্রতিযোগিতা। ব্যতিক্রমী একজনই। তিনি ইতিহাসপুরুষ জয়দেব।
ওদিকে পাটরানি বল্লভা লিপ্ত হয়ে পড়ছেন একের পর এক অবৈধ সম্পর্কে। রাজসভাতে তো বটেই, রাজ অবরোধেও বুনে চলা হচ্ছে প্রতিবিপ্লবের বীজ! সহজযানীরা যবনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে উৎখাত করতে চাইছে বৌদ্ধ-উৎপীড়ক সেন রাজাদের।
এক অস্থির সন্ধিক্ষণের দিকে এগিয়ে চলেছে বাঙালির ইতিহাস। নীচতা-শঠতা-আত্মোৎসর্গ-মহত্ত্ব-ষড়যন্ত্র মিলেমিশে একাকার যেখানে। গৌড়ের বুকে নেমে আসছে এক অদ্ভুত আঁধার।
পরিবর্তনমুখর সে-অন্ধকারই কালক্রমে সচকিত হয়ে উঠবে অষ্টাদশ অশ্বের হ্রেষাধ্বনিতে।
মিতায়িত অধ্যায় পরম্পরায় প্রায় থ্রিলারের গতিতে একই ঐতিহাসিক সময়কালে ঘটে চলা বহুবিচিত্র ঘটনাস্রোতকে কথক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন পরিণাম অভিমুখে। সচেতনভাবেই মধ্যযুগীয় ইতিহাসে কথক কোথাও জাগিয়ে তুলেছেন নন্দীগ্রামের স্মৃতি, কোথাও বা লক্ষ্মণাবতীর কবিযশঃপ্রার্থী তরুণেরা হয়ে উঠেছেন পঞ্চাশের মধ্যরাতে কলকাতা শাসনকারী কবিকূলের প্রতিরূপ।
রাজপ্রাসাদের বিলাস বৈভবের অন্তরালে চলেছে হীন ষড়যন্ত্র, চেনা মানুষের মুখের আড়ালেঙ্গা ঢাকা দিয়েছে হীন শয়তান।… বাংলার রাজধানী বিধর্মীর হস্তগত হয়েছে, কিন্তু দূরে কেন্দুবিস্ব গ্রামে তখনও মন্দ্রিত জয়দেবের কণ্ঠস্বর, শ্রীধর দাসের সদুক্তিকর্ণামৃত-তে অনাগত কবিদের পদধ্বনি। ইতিহাসের আকর্ষক পুনর্নির্মাণে, বিচিত্রগামী আখ্যানসূত্রের কুশলী সন্নিবেশে প্রথম উপন্যাসেই সৌম্য যে-প্রত্যাশা জাগিয়েছেন, তাতে পাঠক উদগ্রীব হয়ে থাকবেন তাঁর পরবর্তী লেখার জন্য।
বইয়ের দেশ
Reviews
There are no reviews yet.