যেসব ছেলেমেয়ের বর্ণপরিচয় শেষ হয়েছে তাদের জন্য রবীন্দ্রনাথের ‘সহজ পাঠ’ খুবই উপযোগী বই। বর্ণপরিচয়ের পর এই বই চর্চা করলে একদিকে যেমন অর্জিত বর্ণশিক্ষার ভিত্তি আরও শক্ত হয়, অন্যদিকে তেমনি লেখা ও রেখার মাধ্যমে শিশুর কল্পনাশক্তি ও চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং চারপাশের প্রকৃতি ও সমাজের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। তবে বর্তমানে সময় ও সমাজের দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। শহর গ্রামকে দ্রুত গ্রাস করছে, পরিবার ও সমাজের কাঠামোও দ্রুত পালটে যাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতির সঙ্গে এখনকার শিশুদের যোগ ক্ষীণ হয়ে আসছে, সমাজের অনেক পুরোনো সম্পর্ক ও রীতিনীতিও এখন তাদের কাছে অচেনা হয়ে পড়ছে। এ জন্য এ কালের শিশুরা ‘সহজ পাঠ’ পড়লে তাদের মনে এমন অনেক প্রশ্ন জাগে যা হয়তো আগেকার শিশুদের মনে জাগত না। এইসব প্রশ্নের উত্তর যাতে শিশুরা বইয়ের ভিতর থেকেই পায় তার জন্য ‘সহজ পাঠ’-এর একটি ‘আধুনিক’ সংস্করণের প্রয়োজন এখন অনেকেই অনুভব করছেন। বলা বাহুল্য, এই অভিনব সংস্করণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল বইয়ের পাঠের পরিবর্তন না-ঘটিয়ে স্বচ্ছতর ছবি ও কৌতূহলী প্রশ্নচর্চার মধ্য দিয়ে পড়ার বিষয়কে তাদের পক্ষে সময়োপযোগী করে তোলা।
এখনকার দিনে আর একটি দিক থেকেও ‘সহজ পাঠ’-এর একটি ‘আধুনিক’ সংস্করণের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। গত দেড় দশক ধরে সাক্ষরতা আন্দোলনের ফলে রাজ্যে এখন দরিদ্র নিরক্ষর পরিবারগুলিতেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর আগ্রহ দেখা দিচ্ছে। এইসব পরিবারের শিশুরা প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া, তাই পড়াশোনার ব্যাপারে তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে সাক্ষাৎ কোনো নির্দেশ পায় না। অভিজ্ঞ কেউ দেখিয়ে দিলে সেই নির্দেশ অনুসারে তাদের নিজে নিজেই পড়া ও লেখার অভ্যাস চালিয়ে যেতে হয়। অন্যদিকে এখনকার শিক্ষিত সচ্ছল পরিবারেও দেখা যায় যে, আধুনিক জীবনের কর্মব্যস্ততার জন্য অভিভাবক-অভিভাবিকারা পরিবারের শিশু সদস্যদের লেখাপড়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না। এক্ষেত্রে প্রধানত শিক্ষক বা গৃহশিক্ষকদের আংশিক সহায়তাকে অবলম্বন করেই ছাত্রছাত্রীরা নিজে নিজে পড়া ও নিজে নিজে লেখায় অভ্যস্ত হয়। স্বশিখনের এই অভ্যাসকে পুরোপুরি ফলপ্রসূ করার জন্য ‘সহজ পাঠ’-এর মূল পাঠের সঙ্গে কতকগুলি পাঠ-সহায়ক উপকরণ যোগ করা দরকার। এই দিকে লক্ষ রেখেই ‘সহজ পাঠ’-এর একটি ‘নিজে পড়ি নিজে লিখি’ সংস্করণ (Self-Taught Edition) প্রকাশ করা হল। এই সংস্করণ ব্যবহার করার সময় অভিজ্ঞ কারো সাহায্য একেবারে অনাবশ্যক হবে না, তবে বাইরের এই সাহায্যের ওপর পড়ুয়ার নির্ভরশীলতা অনেকখানি কমে যাবে। মূল পাঠের শেষে যোগ করা ‘পাঠচর্চা’ তাকে নিজে নিজে বলতে, পড়তে ও লিখতে সক্ষম করে তুলবে, আর বইয়ের শেষে জুড়ে দেওয়া ‘অভিধান’ তাকে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করবে।
এই সংস্করণে সাধারণভাবে পশ্চিমবলা বাংলা আকাদেমির বানানবিধি (জুলাই ২০০৩) ও বানান-অভিধানে প্রদত্ত বানান অনুসরণ করা হয়েছে। দু-একটি জায়গায় যে ব্যতিক্রম ঘটেছে পাঠ-নির্দেশিকায় তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
Reviews
There are no reviews yet.