১৯৪৭ সালের গান্ধী জয়ন্তীতে প্রকাশিত হয়েছিল উপেন্দ্রচন্দ্র ভট্টাচার্য্য বিরচিত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। নানা কারণে তার এই পুনঃপ্রকাশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
গ্রন্থকার তাঁর মুখবন্ধে যদিও এই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন যে, ‘ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস লিখিবার সময় এখনও আসে নাই’, তথাপি সাত অধ্যায়ের সীমিত পরিসরে যে দক্ষতায় তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বহুকৌণিক ইতিহাসকে বিধৃত করতে চেয়েছেন, তা সবিশেষ কৃতিত্বের দাবি রাখে। যে বিশ্বস্ততা ও তথ্যনিষ্ঠার সঙ্গে এ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে উপেন্দ্রচন্দ্র ইংরেজ আমলে স্বাধীনতার সূত্রপাত থেকে শুরু করে জাতীয় চেতনার উন্মেষ, সিপাহী বিদ্রোহ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গোড়ার কথা প্রভৃতি প্রসঙ্গের অবতারণা করে, বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন ছুঁয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন পর্যন্ত অহিংস ও সহিংস আন্দোলনের এক ক্রমিক ধারাবিবরণী দিতে প্রবৃত্ত হন, তা পক্ষপাতশূন্য ও প্রশংসনীয়। এই বোধেরই ক্রমবিস্তার ঘটে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (দ্বিতীয় অধ্যায়) ও আজাদ হিন্দ ফৌজ (তৃতীয় অধ্যায়) সংক্রান্ত অধ্যায় দুটিতে। চতুর্থ অধ্যায়ের বিষয় ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতার হস্তান্তর করে ইংরেজদের ভারত ত্যাগ, ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে তখন জাতির উদ্দেশে জওহরলাল নেহরুর ভাষণ, অন্যান্যদের বাণী ও বক্তৃতা ইত্যাদি। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায়ও তাদের বিষয়গুণে সবিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত।
সব মিলিয়ে, উপেন্দ্রচন্দ্র ভট্টাচার্য্য বিরচিত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এমন এক দুর্লভগ্রন্থ যা পাঠে স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে শুধু অবহিতই হওয়া যায় না, অনুভব করা যায় সেই সুমহান সংগ্রামের প্রাণস্পন্দন।
এই ইতিহাস অভিলেখ্যগারের দলিল-দস্তাবেজ-নির্ভর নীরস, নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস নয়, এই ইতিহাস এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখ দিয়ে দেখা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আবির্ভাব ইতিহাস। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে শুধু জানতে নয়, অনুভব করতে হলে এই ইতিহাসের পাঠ ও পুনঃ পাঠ অপরিহার্য।
Reviews
There are no reviews yet.