চলমান প্রসঙ্গ / CHALAMAN PRASANGA
চণ্ডী লাহিড়ী
শুরু সেই ১৯৫২-তে, জমছে তো জমছেই, কিংবদন্তীর পাড়াড়! কখনো নিজের দেখা বিখ্যাত ব্যক্তি, কখনো তাঁদের জীবনীর ছেঁড়াপাতা, চানাচুরের ঠোঙা, বিদেশি সাহিত্যের টুকরো সংবাদ_বহুবিচিত্র সংগ্রহ। বাংলায় Anecdote–এর বই নেই। নেই বলে, কোনোদিনই হবে না? চণ্ডী লাহিড়ী শুরু করলেন_চলমান প্রসঙ্গ_অজস্র না-জানা ঘটনা। বাংলা কার্টুনের ইতিহাস আর বাঙালির রঙ্গব্যঙ্গ-চর্চার ইতিহাস আগেই হয়েছে। এবার বাংলায় Anecdote শুরু হল_নিজের কয়েক হাজার সংগ্রহ থেকে প্রথম কিস্তি। সাহিত্য-সংগীত-ইতিহাস মহাযুদ্ধ, বিজ্ঞান ইত্যাদির সাড়ে বত্রিশ ভাজা দিয়ে শুরু। ইতিহাসের সম্মার্জনীর প্রবল প্রহারে সবই তো ডাস্টবিনে হারাতে বসেছিল। তার থেকেই কয়েকটি উজ্জ্বল উদ্ধার।
CHANDER PAHAR / চাঁদের পাহাড় (COMICS)
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে হলে কী হবে, ছেলেবেলা থেকেই শঙ্কেরর দু-চোখ জুড়ে অ্যাডভেঞ্চারের স্বপ্ন। লিভিংস্টোনের মতো সেও চায় আফ্রিকা অভিযানে বেরিয়ে পড়তে। কিন্তু অভাবের সংসারে একটা চাকরি না-হলে আর চলছে না। তার ভাগ্যে কি তাহলে ঝুলছে শ্যামনগরের জুটমিলে কলমপেষা কেরানির বৃত্তি? এমন সময় অভানীয় ভাবেই উগান্ডা রেলওয়েতে কাজ জুটে যায় শঙ্করের। তারপর মেলে জনহীন এক প্রান্তরে স্টেশনমাস্টারের চাকরি। কখনো পশুরাজ সিংহ আবার কখনো-বা আফ্রিকার ক্রূরতম সর্প ব্ল্যাকমাম্বার মোকাবিলা করতে করতে দিন কাটে শঙ্করের। এমন সময় হঠাৎ-ই নাটকীয়ভাবে তার দেখা হয় মধ্যবয়সী পোর্তুগিজ অভিযাত্রী দিয়েগো আলভারেজ-এর সঙ্গে। দু-জনে মিলে খুঁজতে বেরোয় রিখটারসভেল্ট পর্বতমালায় চাঁদের পাহাড়। হলুদ হিরের খনি নাকি লুকিয়ে আছে সেখানেই। কী হয় তারপর ? জানতে গেলে পড়তে হবে বিভূতিভূষণের এই কিশোর ক্লাসিক।
মহাকবি কালিদাসের ইতিহাস / MOHAKABI KALIDASERITIHAS
সতীপতি ভট্টাচার্য
শেকসপিয়রের মতোই দুর্জ্ঞেয়, রহস্যময় ও কুয়াশাবৃত কালিদাসের জীবন। তাঁর জন্ম খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে, নাকি খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে_এ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক আছে। যা নিয়ে বিতর্ক নেই, তা হল শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়েও তাঁর অবিসংবাদী জনপ্রিয়তা। কীভাবে কোনো মহাকবি লোককবিতে রূপান্তরিত হয়ে ওঠেন, কী অন্যন্য পারম্পর্যে তাঁকে নিয়ে গড়ে ওঠে শত সহস্র কিংবদন্তী, কালিদাস অথবা কালিদাস-মিথ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে অভিজ্ঞানশকুন্তলম্, বিক্রমোর্ব্বশীয়ম্, মালবিকাগ্নিমিত্রম্ প্রভৃতি নাটকের রচয়িতা যিনি, তাঁর কলম থেকে উৎসারিত রঘুবংশ ও কুমারসম্ভব-এর মতো মহাকাব্য এবং মেঘদূত এবং কুমারসম্ভব-এর মতো মহাকাব্য এবং মেঘদূত ও ঋতুসংহার-এর মতো খণ্ডকাব্য, বাল্মিকী-ব্যাসের পর তিনিই যে শ্রেষ্ঠ ভারতীয় কবি তথা নাট্যকার, এ বিষয়ে প্রায় সকলেই নিঃসংশয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কালিদাস সম্পর্কিত কিংবদন্তী ও লোককাহিনিগুলিকে একত্রিত করে রচিত এই গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৩০ সালে। বাঙালির কালিদাস-চর্চায় যে আবেগ ও অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়, মহাকবি কালিদাসের ইতিহাস সেই ঐতিহ্যেরই নির্ভীক অনুসারী।
মাঝি বাইয়া যাও রে / MAJHI BAIYA JAO RE
আশিসতরু মুখোপাধ্যায়
অমর পাল লোকগানের সেই বিরল শিল্পী যাঁর কণ্ঠে গান আর শুধু গান থাকে না, হয়ে ওঠে দর্শন। ভাটিয়ালি গানের প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীর জীবনও তাঁর কণ্ঠ-নিঃসৃত সংগীতের মূর্ছনার মতো ব্যঞ্জনাময়। এই গ্রন্থেই প্রথম ধরা রইল তাঁর কিংবদন্তী হয়ে ওঠার দীর্ঘ ঘটনাবহুল সংগ্রামময় কাহিনি। সেই আখ্যান তাঁর গানের মতোই সরল, মোহময় ও জাদুকরি। কিন্তু কেন এ মুহূর্তে অমর পালই দুই বাংলায় লোকগানের সবচেয়ে সম্মানিত স্বর? তাঁর কণ্ঠে আছে সেই হিরণ্ময় ঐশ্বর্য, যা আমাদের রোমাঞ্চিত করে অনির্বচনীয় আবিষ্কারের পুলকে। সে আবিষ্কার শাশ্বত এক জীবনবোধকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে প্রোজ্জ্বল। প্রান্তিক মানুষের সহজিয়া জীবনে যে জাদু লুকিয়ে আছে, তার অপরূপ সৌন্দর্যকে আমরা চিনতে পেরেছি তাঁরই সৌজন্যে। ভাঙা নাওয়ের যাত্রী হয়ে জীবনের অকুল দরিয়ায় এই যে আমাদের অনির্দেশ ভেসে চলা, তার সূত্র তো বাঁধা আছে ওই সুরসাধকেরই মরমিয়া কন্ঠস্বরে।
মিশর রহস্য / MISHAR RAHASYA (COMICS)
চিত্রনাট্য ও ছবি সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
কাকাবাবুর কাছে এসেছে আল মামেন নামে এক মিশরীয়। উদ্দেশ্য, একটি দুষ্প্রাপ্য মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার। আল মামেন সাধারণ ব্যবসায়ী নয়, সে নাকি মিশরের বিপ্লবী নেতা মুফতি মোহম্মদের শিষ্য। কাকাবাবুকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে মুফতি মোহম্মদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাবার ব্যবস্থা করল সে। কিন্তু কাকাবাবুকে কী যেন একটা সাংকেতিক লিপির ইঙ্গিত করে মারা গেলেন মুফতি মোহম্মদ। দুষ্প্রাপ্য সেই লিপির সাংকেতিক সূত্র ধরে কাকাবাবু আর সন্তু পৌঁছোল মিশরে। কী হল তারপর? রহস্যভেদে সন্তু-কাকাবাবু।
ভাস্কার চিত্রকর ভূনাথ মুখোপাধ্যায় / BHASKAR CHITRAKAR BHUNATH MUKHOPADHYAY
দেবরঞ্জন চক্রবর্ত্তী
যুগপৎ প্রাচ্য ও প্রতীচ্য ধারায় শিক্ষিত ভূনাথ মুখোপাধ্যায়ের শিল্পকর্ম একসময় দেশেবিদেশে কলারসিকদের সমাদর লাভ করেছিল। প্রতিকৃতি অঙ্কনে, নিসর্গদৃশ্য রচনায় কিংবা পেনসিল স্কেচে তাঁর সমকক্ষ শিল্পী দুর্লভ। ভূনাথের ব্যতিক্রমী জীবন এবং তাঁর বিপুল শিল্পকর্মের প্রতিনিধিত্বকারী নমুনার আলোকচিত্র-সহ এই গ্রন্থ শিল্পী সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা কিয়দংশে হলেও দূর করবে।
সুকান্ত সমগ্র / Sukanta Samagra
সম্পাদনা ড. উজ্জ্বলকুমার মজুমদার
যে রাজনৈতিক স্লোগান বা সংহত, সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক বার্তা সুকান্তর কবিতায় দীপ্ত হয়ে ওঠে তা তখনকার উদ্দীপ্ত জনজীবনের স্বপ্নেরই বার্তা, তখনকার সময়েরই দান। তাঁর কবিতায় হয়তো কখনো কখনো রং-তুলির কৈশোরক স্পর্শ কম লেগেছে, কিন্তু আন্তরিকতার অভাব ছিল না। রাজনীতি আর কাব্যিক আবেগের মধ্যে কোনো বিরোধ আছে বলে মনে হয়নি তাঁর। কেনই বা মনে হবে! জীবন-স্বপ্নই তো রাজনীতি। আর, সুকান্ত-র কাছে তাঁর কবিতা তো সেই জীবন-স্বপ্নেরই প্রকাশ। যে ছাড়পত্র দিয়ে কবিতার আসরে নেমেছিলেন তিনি, তাতে ‘এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি_ নবজাতকের কাছে’_এই অঙ্গীকারই ছিল। মাটির রসের মধ্যে ভাবী বনস্পতির সম্মতি পেয়েছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের উচ্চারণেই তিনি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন। ‘যদিও রক্তাক্ত দিন, তবু দৃপ্ত তোমার সৃষ্টিকে/এখনো প্রতিষ্ঠা করি আমার মনের দিকে দিকে।’ যে ‘বলিষ্ঠ’ শিশুদের জন্যে বাসযোগ্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন সুকান্ত, সেই শিশুদেরই তাঁর কবিতায় দেখা গেল অশ্বত্থ-শিশুর প্রতীকে। উদ্ধত প্রাচীন প্রাসাদের গায়ে অবাধ্য ফাটল ধরিয়ে গোপন শক্তির বারুদ জমিয়ে তারা রক্ত-ঘাম-চোখের জলের ধারায় বিদ্রোহের দূত হয়ে আসছে।
সমাজবিপ্লবী আম্বেদকর জীবন ও সাধনা / Samajbiplabi Ambedkar Jiban o Sadhana
সম্পাদনা দেবব্রত ঘোষ
জন্মের একশো পঁচিশ বছর পরেও যদি কোনো মানুষ একটি দেশের প্রাত্যহিক জীবনে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়ে যান, তবে তাঁর জীবন ও কর্মের পুনর্মূল্যায়ন এক আশু কর্তব্য। বাবাসাহেব আম্বেদকর এমনই এক অলোকসামান্য ব্যক্তিত্ব। শুধু বর্ণবৈষম্য কিংবা অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেই যাওয়া নয়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের তীব্র সমালোচনাকারী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসেবেও তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন এক বহুমুখী প্রতিভা। ভারতীয় দলিত রাজনীতির প্রবক্তা তথা সংগঠকরূপে তো বটেই, সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তিনি ছিলেন এক আপোশহীন যোদ্ধা। ভারতীয় সংবিধানের রূপকার এই মানুষটিই আবার ছিলেন হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক ও পাকিস্তান গঠনের আন্দোলন প্রসঙ্গে স্পষ্টবাদী এক অনন্য মতের প্রবর্তক। যেহেতু তিনি ছিলেন সব ধরনের শোষণের বিরুদ্ধেই মূর্ত প্রতিবাদ, তাই নারীর অধিকার নিয়েও বাবাসাহেব পরিচয় রেখেছিলেন সুচিন্তিত ভাবনার। গান্ধিবাদী কংগ্রেসি সামাজিক-রাজনৈতিক নীতি ও কার্যক্রমের কুণ্ঠাহীন সমালোচক এই ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ছিলেন আদ্যন্ত জাতীয়তাবাদী।